আমাদের অন্তরকে বানানোই হয়েছে এইভাবে। এই দিল অন্যকারও সংস্পর্শে ততটা উজ্জীবিত হয় না, যতটা হয় নবিজির ক্ষেত্রে। আমাদের আবেগ-ভালোবাসা-শিহরন সব উথলে ওঠে এই একটা নামের মধ্যেই। এইখানে এসে আমরা কোনো ছাড় দিতে রাজি না। মুহাম্মাদ স. আমাদের সম্মান, আমাদের গাইরত। তাঁকে ছেড়ে আমরা জান্নাতে যেতেও রাজি না।
নবি-প্রেমিক অনেক মানুষ সফর করেছেন তাঁর রওজায়। রওজাকে একবার যে স্বচোক্ষে দেখেছে, রিয়াজুল জান্নাতে যে একবার দুই রাকাত নামাজ পড়েছে, সে জানে দিলের হালত কেমন হয়। প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি ক্ষণে মনে হতে থাকে—হৃদয়টা বান্ধা আছে এই সবুজ গম্বুজের মধ্যে। আর যদি ফেরা না লাগত! কেউ যদি এসে তাড়া না দিত! আহ, কতই-না ভালো হতো! আর বাইতুল্লাহকে দেখে তো চোখের পানি অটোমেটিক ঝরতে থাকে। মনে হয় জীবনটা এখানেই কাটিয়ে দিই। “আমি শুয়ে আছি কাবার ছায়ায়, কেন আমাকে জাগিয়ে দেওয়া হবে! আমি আশ্রয় নিয়েছি জান্নাতের টুকরায়, কেন আমাকে ভিসার কথা বলে তাড়া দেওয়া হবে!” মন মানে না। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময় ফুরিয়ে যায় চোখের পলকেই। দিলের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মনে হয়, এই দরজা ছেড়ে দু’কদম সামনে এগোলেই আমি মারা যাব।
এই বইতে হজের এমন মনোমুগ্ধকর বর্ণনাই স্থান পেয়েছে। ভ্রমণকাহিনী হিসেবে লেখক যা তুলে ধরেছেন, সেটা যে-কারও হৃদয়কে গলিয়ে দেবে। বইটি শেষ করে পাঠক বুঝতে পারবেন, মুমিনের পরান আসলে কোথায় বাধা আছে। পরানবন্দির জগতে আপনাকে স্বাগতম…
Abubakar Siddique –
*পরানবন্দী*
শরীর ও প্রাণের মিশেলে মানুষ। মুসলমানদের শরীর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকলেও তাদের প্রাণ যে বন্দি থাকে একজায়গায়।
পেয়ারা হাবিব রাসূলে আরাবী সা: এর রওজায়, সাহাবায়ে কেরাম রা:দের ঘোড়া ছোটানো সেই তপ্ত মরুভূমিতে,হৃদয়ের শহর মক্কা-মাদিনায়।
সময়ের সাড়াজাগানো জনপ্রিয় লেখক ডা: সামসুল আরেফিন শক্তি একজন তরুণ প্রজন্মের ক্যারিশম্যাটিক লেখক। মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের সাথে তার নিজস্ব রচনাশৈলির মাধ্যমে অত্যন্ত চমৎকারভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া তার লিখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
লেখক তার উমরাহ সফরের সফরনামা লিখেছেন যেন হৃদয় নিংড়ানো অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা দিয়ে।
পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে লেখকের গল্পকথার শান্তর সাথে আমিও ঘুরে বেড়াচ্ছি মাদিনার ওলি গলিতে।
বইটাকে শুধু সফরনামা বললে ভুল হবে।নবী প্রেমের গভীরতা লেপ্টে দেওয়া হয়েছে যেন প্রতিটা শব্দে শব্দে।
এক ঐতিহাসিক স্হানের সাথে সেই ঘটনা, সংশ্লিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম রা: দেরকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই লিখনীতে।
এই বইটা সম্পর্কে যতটুকু খোঁজ নিয়েছি “বইটা পড়ে কান্না আসেনি এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া যায়নি”
কখনো গোনাহের পাহাড়ে জমা পাথরেও পানি পড়ে ঝর্না হয়ে।সেরকম পরানের অনুভূতির আবেশে যদি পরশ বোলানো যায়।সেরকম ই একটি বই পরানবন্দি। তরুণ প্রজন্মের একেকজনকে যদি পড়াতে পারতাম বইটা? কতোইনা চমৎকার হতো!
সবার প্রতি আমার হৃদয়দীপ্ত আহ্বান
“এই বইটা অবশ্যই পড়ে দেখবেন”
রকিব আকন্দ –
লেখক শামসুল আরেফিন শক্তি ভাই তার তথ্য সমৃদ্ধ লেখার জন্যে সমধিক পরিচিত, তার বইয়ে অনেক রিসার্চ এবং যাচাই বাছাই করে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরেন।
এ বইটা আমার মনেহয় তার গতানুগতিক লেখার ব্যতিক্রম। আমরা যেমন আমাদের সবটুকু আবেগ এবং ভালোবাসাগুলো খুব প্রিয়জনের জন্যে সযত্নে তুলে রাখি। তার সান্নিধ্য পেলে তাকে যেমন হৃদয়ের সব সুখ-দুঃখগুলো উজাড় করে তার কাছে সমর্পণ করি। তেমনি লেখক মক্কা-মদীনার জন্যে হৃদয়ে সঞ্চিত সবটুকু আবেগ ‘পরানবন্দী’র পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দিয়েছেন।
সাথে পাঠক আমি এবং আমার থেকে যারা নিয়ে পড়েছে তারা সকলে একটা কথা বলেছেন যে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
Aruba Mabrura –
পরানবন্দী!
একজন মুসলিমের হৃদয় কোথায় বন্দী? আমরা জন্মগত এবং নামেমাত্র মুসলিম। আমরা মনে করি আমাদের হৃদয় বোধহয় দামী আসবাবপত্র, বিলাসবহুল বাসস্থানে বন্দী। কেননা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনার কেন্দ্রে এগুলোকেই রাখি এবং এগুলোর পানেই ছুটি। “পরানবন্দী” বইটি আমাদের উপলব্ধি করিয়ে দিয়েছে সত্যিকার অর্থে একজন মুসলিমের পরান কোথায় বন্দী। আমাদের পরান তো বন্দী আছে বাইতুল্লাহর ছায়ায়, সবুজ গম্বুজের মায়ায়! হয়তো সকল মুসলিমের জীবনে একবার হলেও হজ্জ ও উমরাহ করার ইচ্ছা পোষণ করে থাকে মুসলিমের করণীয় বিধান হিসেবে। কিন্তু অন্তরের অন্তস্থল থেকে সেই ইচ্ছা কয়জনের আসে? “পরানবন্দী” বই সেই পিপাসাকে জাগ্রত করে দিয়েছে। এই বইটি পরে শুধু পাঠকের চোখ কাঁদেনি, কেঁদেছে হৃদয়! যেন আমিই ঘুরে বেড়াচ্ছি মদিনার অলিতে-গলিতে। মানুষ বন্দিত্ব থেকে মুক্তি চায়। কিন্তু আমি এই বন্দিত্ব থেকে মুক্তি চাই না। যেন আমৃত্যু এই পরান বন্দী থাকে আল্লাহর হাবিব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শহরে। যে পরানবন্দী আছে ৫১২২ কিলোমিটার দূরে আর দেহ পরে আছে এখানে, সে মানুষ বাঁচে কি করে! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা খুব শীগ্রই এই দেহ ও পরানের মিল করে দিক। (আল্লাহুম্মারযুকনা হাজ্জা বাইতিকাল হারাম, ইয়া রাব্বা কাবা!)
মাস্টরিড একটা বই। বইটি পরবেন আর কাঁদবেন! কল্পনায় ঘুরে বেড়াবেন মক্কা-মদিনার অলিতে-গলিতে। আর উপলব্ধি করবেন সত্যিকার অর্থে একজন মুসলিমের পরান কোথায় বন্দী!
Jarin Tasnim Maya –
‘পরানবন্দি’ বইটার নাম শুনে স্বাভাবিকভাবেই পাঠক হৃদয় কৌতুহলী হবে । আরও একটা প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে আমাদের পরান আসলে কিসে বন্দী? উত্তর হলো নবিপ্রেমিক প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিরই পরান মদীনায় বন্দী, বাইতুল্লাহর কালো গিলাফে বন্দী। প্রতিটি মুসলিমই চায় জীবনে একবার হলেও আল্লাহ তাআলা যেন তাঁকে প্রিয় হাবীবের শহরে নিয়ে যান। জান্নাতের এক টুকরা বাগান স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার তৌফিক দান করেন। তারপর আল্লাহ যখন বান্দার এই দুআ কবুল করে বাইতুল্লাহর মেহমান হিসেবে কাউকে আমন্ত্রণ জানান তখন সেই বান্দার অনুভূতি কেমন হতে পারে সেসবের মনোমুগ্ধকর ও আবেগঘন বর্ণনা স্থান পেয়েছে ডা. শামসুল আরেফীনের ‘পরানবন্দী’ বইটিতে। কি চমৎকার অনুভূতি! এতোদিন সিরাতের পাতায়, ইতিহাসের বইগুলো পড়ে মক্কা মদীনার যে প্রতিচ্ছবি মানসপটে আঁকা আছে এখন তা মিলাবার পালা। আহ! এমন মুহূর্ত যাদের জীবনে এসেছে নিঃসন্দেহে তাঁরা সৌভাগ্যমান। এই বইটির শান্ত চরিত্রটি যার প্রতিনিধিত্ব করেছে। ভ্রমণকাহিনী হিসেবে লেখক যা তুলে ধরেছেন, সেটা যে কারও হৃদয়কে গলিয়ে দেবে।
বাইতুল্লাহ যিয়ারতের তামান্না আরও জোরদার করতে মাস্টরিড একটা বই।
Jannatul Ferdous –
মুমিনের পরান যেখানে আটকে আছে, সেইসব স্থান নিয়েই ভ্রমণকাহিনীমূলক উপন্যাস ‘পরানবন্দি’। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র শান্তর মাধ্যমে লেখক পাঠককেও ভ্রমণ করিয়েছেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতি বিজড়িত শহর মক্কা-মদিনায়। যেখানে যাওয়ার ভাগ্য সবার হয় না সেখানেই ডাক পড়লো শান্তর। যেদিন ঠিক হয়েছে ওরা যাবে, তার ঠিক ১৪ দিনের মাথায় কীভাবে কীভাবে যেন ভিসা-টিকিট সব কমপ্লিট। ঠিক ১৪ দিন আগেও ওরা কল্পনা করেনি, ঘুণাক্ষরেও না।
সফরনামাটি পড়ে মনে হয়েছে লেখক নিজের উমরা সফরের অভিজ্ঞতাই শান্তর মাধ্যমে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। নাম পুরুষে রচিত বইটি কখনো কখনো মনে হয়েছে উত্তম পুরুষেও লেখা হয়েছে। লেখনশৈলী সাবলীল-প্রাঞ্জল। প্রতিটি শব্দ-বাক্য যেন হৃদয়ের মর্মগ্রাহী আবেগ। বই যখন পড়ছি তখন আমি বাস করছি অন্য জগতে। শান্ত যখন হুট করে ১৪০০ বছর পিছনে চলে যায় তখন চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কখনো কখনো চোখের পাড় অশ্রু সংবরণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে না; কার্নিশ টপকে গড়িয়ে পড়ে। লেখকের আবেগ পাঠককেও ছুঁয়ে যায়। বইয়ে প্রায়ই কবিতার দেখা মেলে। লেখক যে এতো সুন্দর সুন্দর ছন্দে কাব্য গাঁথতে পারেন জানা ছিল না। আবার, লেখকের স্বভাবসুলভ কলম পাঠককে পাঠ করিয়ে নিচ্ছিলো গণতন্ত্র-পুঁজিবাদের অন্তঃসারশূন্যতা। শেষের দিকে তা একটু প্রকট।
বইটিতে মক্কা-মদিনার বিভিন্ন স্থানের অতীত ও বর্তমানের সচিত্র বর্ণনা ও মানচিত্রও দেওয়া হয়েছে। বইটি থেকে জানতে পেরেছি না-জানা অনেক কিছু। সর্বোপরি, বইটা সুখপাঠ্য ছিল।